Subscribe Us

header ads

রমাদান অাত্মশুদ্ধি অাত্মন্নোয়ন অাত্মসমালোচনা -০১


#রমাদান মাস। কুরঅান নাযিলের মাস।রহমাহ অার বারাকাহতে পরিপূর্ণ একটি মাস। হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ একটি রাত অাছে এমাসেই। ইবাদাহ অার অা'মলের বহুগুণে সাওয়াব বৃদ্ধির মাস তো এটাই। দু'অা কবুলের সুমহান সুযোগগুলো এ মাসেই। গুনাহ মাফ করে নিষ্কলুষ নিষ্পাপ পবিত্র হয়ে যাবার সবচেয়ে সেরা মাস হলো এই রমাদান। বিশ্বাসী অাত্মাগুলোর জন্য এক সুবিশাল সুবর্ণ সুযোগ সিয়ামের মাস রমাদান। সেই সুবিশাল সুযোগ পেয়ে মু'মিন হৃদয়ে পড়ে সাড়া।প্রভূর অবারিত রহমাহ-মাগফিরাহ সিঞ্চনে তাঁরা উঠেপড়ে লেগে যায়।প্রভূর প্রচুর ইবাদাত করার সুযোগ পেয়ে তাদের হৃদয়ে বয়ে যায় প্রশান্তির হিন্দোল। অানন্দের বন্যা।

এই সিয়াম-সাধনার মাহে রমাদানকে কেউ কাজে লাগায় পূর্ণরূপে। দিনের বেলায় সিয়াম সাধনায় অার রাতের বেলায় ক্বিয়ামুল্লাইলের মাধ্যমে তাকওয়ার পারদটা তাদের অারো উপরে ওঠে। অাল্লাহর রঙ্গে জীবনকে করে রঞ্জিত। বিপরীতে কেউ থেকে যায় দূর্ভাগা। এমন হতভাগা যে, স্বয়ং জিব্রাইল (অা.) এবং নবিজী (স.) এর অভিশাপে অভিশপ্ত তারা! ভাবা যায়, কী ভয়ংকর বিষয়!!

এই যে পৃথিবীর বুকজুড়ে রমাদান অাসে রমাদান যায়। অামাদের অধিকাংশ লোকের এবং যারা ইসলামের সুমহান বাণী মানুষের কর্ণকুহরে পৌঁছিয়ে দেয়, তাদেরও অাদত-অভ্যেস,অাচার-অাচরণ,ঈমান-ইয়াক্বিনের কোনো চেইঞ্জ অাছে কি?সরল জাওয়াব- নেই। রমাদান তো চায়-ই মূলত বিশ্বাসী চেতনায় পরিবর্তনের মাতাল হাওয়া বইয়ে দিতে জগতের বুকে। সংযমের মাধ্যমে মানুষের ভোগবাদী চেতনাকে ঝলসে দিতে। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতে।গর্ব-অহংকার, হিংসা-হীনমন্যতা, জুলম-অপবাদের শিকড় কেটে উপড়ে ফেলতে।অাত্মকেন্দ্রীক চিন্তার রাশ টেনে ধরে সামষ্টিক -উম্মাহ কেন্দ্রীক চিন্তার সুষম বিকাশ ঘটাতে।


কিন্তু অামরা করছি কী,এই পবিত্র মাসেও পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবিয়ে রেখেছি নিজেদেরকে। নিজেদের অাশপাশের সব কিছুকে। অামরা মিথ্যে বলা ছাড়ছি না। জুলম করা হতে বিরত থাকছি না। অন্যের নামে অপবাদ, অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করা, বিদ্বেষ চর্চার কোনো কমতি করছি না।কৃপণতা-সংকীর্ণতার সামান্যতম রেশটুকুনও যায় নি অামাদের হৃদয়ের।পাপের প্রখরতায় মন-মনন কলুষিত।হৃদয়পাড়া উত্তপ্ত পাপের লেলিহান শিখায়। পাপের পথ হতে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিখুঁত-নিখাঁদ মুত্তাকি হওয়ার প্রচেষ্টাটুকুনও করছি না।
অাচ্ছা, তাহলে অামি সারাটাদিন উপবাস করে বাদুড়ের মতো নাওয়া-খাওয়া বাদদিয়ে থেকে লাভটা কী হচ্ছে? শুধু শুধু শরীর ও অাত্মাকে কষ্ট দিচ্ছি না তো?একূল -ওকূল দুকূলই নাশ করছি না তো?
বছরের বারোটি মাস যেভাবে সময় অপচয়ের একটা টর্নেডো বইয়ে দিতাম জীবন নামক এই ছোট্ট জনপদের ওপর -এই মূহুর্তে রমাদনের মতো এমন একটা নিয়ামতপূর্ণ মহান মাসেও অামি তাই-ই করছি।দিনশেষে একটা অায়াতের তাফসির পড়ছি না। যে মাসে অাল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা
তাঁর কালাম নাযিল করেছেন,সেই মাসেও একটা পারাও তিলাওয়াত করছি না। কুরআন খতমের মহা অায়োজন অনেকেই করি, কিন্তু কুরআনের সুমহান শিক্ষাটাকে হৃদয়ে গেঁথে নিচ্ছি না। নবি(স.)
এর জন্যে মহা ভালোবাসা দেখালেও একটা সিরাহ'র গ্রন্থ(জীবনীগ্রন্থ)পড়ছি না অামি। পড়ার মতো উদ্যোগও নিচ্ছি না।দু'টো পৃষ্ঠাও পড়ছি না জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবার জন্যে।মুসলিম উম্মাহ সহ বিশ্বমানবতার জন্যে দরদ অামার যেনো উপচে উপচে পড়ে,অথচ উম্মাহ'র জন্যে অাইডল হচ্ছি না।মানবতার জন্যে কিছু করবার উপযোগী করে নিজেকে তৈরি করছি না।ফিতনা-ফাসাদের করালগ্রাসে অাগ্রাসিত হয়ে নিজেকে নিঃশব্দে নিঃশেষ করছি অবিরত!

রমাদানেও অামরা অামাদেরকে রব্বের প্রতি সঁপে দিচ্ছি না।নফসের দাসত্বের শৃঙ্খল হতে এখনো অামি মুক্ত নই পুরোপুরি।স্বলাতে এখনো অামার বিনয় অাসে না।খুশু -খুজু'র সাথে অাজো দু'রাকাত স্বলাত অাদায় করছি না।দু-চোখ হতে পরকালের জাওয়াবদিহিতার ভয়ে বিগলিত অশ্রুধারায় ভাসছে না বুক।অপরাধের অনুসুচনায় কান্নার শ্রাবণ নামছে না বুকজুড়ে অামার।কেঁদে কেঁদে অাজো অামি মাগফিরাত চাচ্ছি না অাল্লাহর কাছে।
অামি সিয়াম সাধনার মুবারক মাসেও স্বজন পরিজন পিতামাতার সাথে সদাচরণ করছি না।
জিঁড়কী দিয়ে এখনো কথা বলি।হৃদয়ে অাঘাত করি।ক্ষতবিক্ষত করি তাঁদের অন্তর।অসহায় অনাথকে এখনো অামি তাড়িয়ে দিই।সহোযোগিতার হাত প্রসারিত করছি না তাদের প্রতি!হায়,এটাই কি অামাদের ঈমানের দাবি?

সিয়াম সাধনায় তাকওয়ার যে প্রশিক্ষণ,সেই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হচ্ছি না।কতো মানুষ এই সৌভাগ্যবান মাস হতে সৌভাগ্যের অধিকারী হচ্ছে।নিজেদের পরকালের পাথেয় সঞ্চিত করে জীবনকে নিচ্ছে সাফল্যের সোনালি তোরণে।
পরকালের জগতে রব্বের অাশ্রয়ে অাশ্রিত করবার মহা অায়োজনে তারা কতো এগিয়ে।অার কতো মানুষ হেলায় হারাচ্ছে সৌভাগ্যের এই মুবারক মাসকে।অার রাসুল(স.)-জীবরাইল(অা.) এর অভিশপের অনলে পড়ে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে তলিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের অতলান্তে।উফ!ভাবতেই গা শিউরে ওঠে!গুলিয়ে অাসে ভয়ে সমস্ত শরীর!
এরপরেও রমাদান শেষ করবে কেউ স্বচ্ছতা-পবিত্রতার পরশে।যেমনটি হয় ধুলোজমা পত্র-পল্লব,গাছগাছালির ঢালপালা বৃষ্টির পর।

সারা সপ্তাহজুড়ে যখন প্রখর রোদ্রের উত্তাপে সব মলিন হয়ে যায়।নেতিয়ে পড়ে গুল্মলতা,গাছগাছালির শাখাপ্রশাখা।প্রচণ্ড ধুলোবালিতে বিবর্ণ হয়ে যায় সব।তখন যেমন প্রচণ্ড ঝড় অার দমকা হাওয়া এসে ধুলোবালি উড়িয়ে নিয়ে যায়।বৃষ্টির পানি ধুঁয়ে মুছে সব সাফ করে ফিরিয়ে দেয় তার অাপন রূপ-রঙ-গন্ধ।ঝকঝকে সতেজ করে তার সজীবতা ফিরে দেয়।তেমনি করেই পবিত্র রমাদানও কাউকে করবে নির্মল-স্বচ্ছ-পরিশুদ্ধ পবিত্র।এঁদের জন্যই পরিশেষে বেহেশতি সওগাত।
ইশ!অামিও যদি থাকি তেমন পরিশুদ্ধ- নির্মল-স্বচ্ছ সৌভাগ্যবান বিশ্বাসীদের ভীড়ে!রাইয়ান নামক দরোজা যাঁদের তরে!
রমাদান;আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের শ্রেষ্ঠ সময়//রেদওয়ান রওয়াহা
Image may contain: possible text that says 'Ramadan Time to recharge Emaan'

Post a Comment

0 Comments